মৃতদেহ থেকে রক্তক্ষরণ হয় না

যোহনের সুসমাচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে, যা যীশুর ক্রুশে মৃত্যুবরণ না করার মতকে সমর্থন করে:

“কিন্তু একজন সেনা বর্শা দিয়া তাঁহার কুক্ষিদেশ বিদ্ধ করিল; তাহাতে অমনি রক্ত ও জল বাহির হইল।” (যোহন ১৯:৩৪)

বর্শা দিয়ে কোনো শিরা বা ধমনী আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার পর রক্ত বের হওয়ার বিষয়টি রক্তসঞ্চালন-প্রক্রিয়া বজায় থাকার একটি লক্ষণ। খেয়াল করুন ‘অমনি বের হলো’ কথাটি, যাত্থেকে বোঝা যায় রক্তচাপের কথা। আর ‘পানি’ বের হওয়ার কথা বলা হয়েছে সম্ভবত বক্ষ-গহ্বরের পানি নির্গত হওয়া বোঝাতে, যা বুকের খাঁচা এবং ফুসফুসের মাঝে ছিল।

মৃতদেহ থেকে রক্ত ছুটে বের হয় না; তাই, উদ্ধৃত শ্লোকটির কারণে অন্তত এক জন চার্চ ফাদার, অরিজেন, সমস্যায় পড়েন। যোহন ১৯:৩৪ আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি স্বীকার করেন যে, মৃত্যুর পর রক্ত জমাট বাঁধে, তবে এক্ষেত্রে রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে, আর তাই এর কোনো ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই (Contra Celsus, by Origen, translated by H. Chadwick, Cambridge U)।

যীশুর দেহের পার্শ্বদেশে বর্শার খোঁচাটি কোনো প্রকার চূড়ান্ত আঘাত ছিল না। এটা আসলে করা হয়েছিল হালকাভাবে, ইতোমধ্যে তার মৃত্যু ঘটেছে কিনা তা দেখার জন্য। মৃত্যু নিশ্চিত করাটাই যদি উদ্দেশ্য হতো, তাহলে সেই সৈনিক যীশুর বক্ষদেশের সামনের অংশে আঘাত করতো হৃৎপিণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য। যাহোক, কোনো ব্যক্তিকে যদি মৃত্যু ঘটার জন্য পর্যাপ্ত সময় পর্যন্ত ক্রুশে ঝুলিয়ে রাখা না হয়, তখন তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে সাধারণত তার দু’পা ভেঙ্গে দেওয়া হতো। আর, এ কাজটিই করা হয়েছিল যীশুর সঙ্গে ক্রুশে ঝোলানো বাকি দু’জন অপরাধীর ক্ষেত্রে।

প্রচলিত বিধির ব্যতিক্রম

সুসমাচারের সাক্ষ্য থেকে এটা বোঝা যায় যে, রোমান শতপতি (সেঞ্চুরিয়ন - একশ’ সদস্যের সেনাদলের নেতা) যীশুর মৃত্যু নিশ্চিত করতে চায় নি। অপরপক্ষে, শতপতি দেখতে পায় যে, যীশু “ইতোমধ্যে মারা গেছে”, তাই সে তার পা দু’টি ভাঙ্গার উদ্যোগ নেয় নি। (দেখুন, “পা-দু’টি ভাঙ্গা হয় নি”) এ বিষয়টি ইহুদীদের দাবির বিপরীতে ছিল। তারা চেয়েছিল বিশ্রামবারের (সাবাথের) দিন দেহগুলো যেন ক্রুশের উপরে না থাকে সেজন্য আগেই যীশুর হাড় ভেঙ্গে তার মৃত্যু ত্বরাম্বিত করতে। (যোহন ১৯:৩১) আর সেটাই ছিল সাধারণ-বিধি। অপরপক্ষে, শতপতি যীশুর শরীরের পার্শ্বদেশে বর্শা বিদ্ধ করেছিল। এটা কি করা হয়েছিল তর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য, যা সম্পর্কে সে নিশ্চিত ছিল না? যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে তার অস্থিও কেন ভাঙ্গা হলো না, যা কিনা প্রচলিত নির্মম পদ্ধতি? আমরা কেন এটা অনুমান করবো না যে, এখানে কতিপয় রোমানের সহানুভূতিসূচক উপাদান বিদ্যমান, যাদের শীর্ষস্থানীয় ছিলেন পীলাত এবং যা কিনা সেই আনুগত্যের শৃঙ্খলে (চেইন অফ কমান্ডের) নিচের দিকেও বিস্তৃত ছিল?

এটা বলা হয়ে থাকে যে, রোমান জল্লাদগণ ছিল শীতল, নির্মম এবং রক্ত-পিপাসু, যারা মানুষের মৃত্যু ঘটানোর কলায় অতিশয় দক্ষ ছিল। শতপতির কার্যকলাপের বিবরণের অংশটিতে আমরা শুধু কিছুটা অসঙ্গতিই দেখতে পাচ্ছি না, আমরা আরও দেখতে পাচ্ছি একজন অত্যন্ত সহানুভূতিশীল রোমান কর্মকর্তাকে এবং এমনকি যীশুর অনুসারীদের মধ্য থেকে একটি গোপনে সক্রিয় দলকে। যীশু যখন তথাকথিতভাবে ক্রুশে নিহত হচ্ছিলেন তখন তিনি (রোমান কর্মকর্তা, সেই শতপতি) ক্রুশের দিকে তাকিয়ে বলেন: “সত্যই ইনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন” (মার্ক ১৫:৩৯)।