“ঈশ্বর-পুত্র” পরিভাষা

ঈসা (আ.) সম্পর্কে যখন “ঈশ্বর-পুত্র” পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তখন এটা মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ্‌ তাঁর মনোনীত বহু বান্দার ক্ষেত্রেও এই পরিভাষা ব্যবহার করেছেন। যেমন, পুরাতন নিয়মে আল্লাহ্‌ দাউদ (আ.) সম্পর্কে বলেছেন: “আমি সেই বিধির বৃত্তান্ত প্রচার করিব; সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, তুমি আমার পুত্র, অদ্য আমি তোমাকে জন্ম দিয়াছি।” (গীতসংহিতা ২:৭) অধিকন্তু, নতুন নিয়মের বংশবৃত্তান্তে আদম (আ.)-কে “ঈশ্বর-পুত্র” হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। (লূক ৩:৩৮)। বস্তুত, কেউ হয়তো যুক্তি দিবেন যে, “ঈশ্বর-পুত্র” হিসেবে আদমের আরও বড় দাবি করার সুযোগ রয়েছে; কারণ, যীশুর মতো তার কোনো পার্থিব পিতা কিংবা মাতা ছিল না।

এসব উদ্ধৃতি এবং অনুরূপ আরো অনেকগুলো উদ্ধৃতির মধ্যকার বিরোধ মীমাংসার জন্য, এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়াটা অযৌক্তিক নয় যে, বাইবেলে ব্যবহৃত “ঈশ্বর-পুত্র” পরিভাষাটি আক্ষরিক অর্থে “ঈশ্বরের পুত্রত্ব” বোঝায় না; বরং, এটি আসলে উপমা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

ঈসা (আ.) এর প্রকৃতি

ঈসা (আ.)-এর নিজের কথা ও কাজেও বোঝা যায় যে, এটি রূপক বা উপমা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ঈসা (আ.) নিজেও ধর্ম-চর্চা করেছেন বলে জানা যায়, যেমন, উপবাস পালন ও প্রার্থনা করা। তবে সম্ভবত সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ প্রমাণ হলো, ঈসা (আ.) দাবি করেছিলেন যে, তিনি ভবিষ্যতের জ্ঞান রাখেন না; কারণ, তিনি যেভাবে দাবি করেন, শুধুমাত্র পিতা নির্ভুল ও সঠিক জ্ঞান রাখেন (মার্ক ১৩:৩২)।

এটি বিশেষভাবে স্মরণে রাখা দরকার যে, খ্রিষ্টীয় ধর্ম-বিশ্বাসে যেহেতু এই ধারণা পোষণ করা হয় যে, যীশুর প্রকৃতি হলো একটি “hypostatic union” যেখানে তিনি ছিলেন “পরিপূর্ণভাবে ঐশ্বরিক” এবং একই সময়ে “পরিপূর্ণরূপে মানবীয়”। এটা সত্য হলে, তিনি কোনোভাবেই তার নিজের সর্বজ্ঞ হওয়ার বিষয়টির অস্বীকার করতে পারতেন না।

অন্যান্য দার্শনিক বিচার-বিবেচনার পাশাপাশি এগুলো মানুষকে বাইবেলের পরিভাষা “ঈশ্বর-পুত্র” এবং যীশুর প্রতি এর আক্ষরিক প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনের দিকে ঠেলে দেয়।